সর্বজনীন পেনশনে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন এবং কয়টি স্কিম আছে

প্রিয় পাঠক, আপনারা কি সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে তা বিস্তারিত ভাবে জানতে চান ? আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব সর্বজনীন পেনশনের রেজিস্ট্রেশন এর উপায় , কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন এবং সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে এর বিস্তারিত। 
সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে-কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ দেশের সকল কর্মক্ষম মানুষ কে পেনশনের সুবিধার আওতায় আনার জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার একটি আইন পাস করেছে।বাংলাদেশ সরকার ধারণা করছে যে, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে দেশের ৮ কোটিরও বেশি মানুষ এ ব্যবস্থার অধীনে আসবে।

ভূমিকা

সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে, কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন, সর্বজনীন পেনশনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক এবং সর্বজনীন পেনশন এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন এই সব কিছু জানতে হলে আপনাকে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে

বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম চালু করেছে। স্কিম বা কর্মসূচি চালু করার মূল উদ্দেশ্য দেশের মানুষদের পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা। সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে ? এর উত্তর হল সর্বজনীন পেনশনে সর্বমোট ৪টি স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো, প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম। নিচে এই ৪টি স্কিম বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
প্রবাস স্কিমঃ যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক যে কিনা বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত অবস্থায় আছেন তারা এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। সেজন্য তাদের অবশ্যই নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিতে হবে।

প্রগতি স্কিমঃ দেশে অবস্থানরত যে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীবৃন্দ অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

সুরক্ষা স্কিমঃ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা নিজ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। যেমন, শ্রমিক, কৃষক, রিক্সাচালক, জেলে, কুমার, কামার, তাঁতি এবং ব্যবসায়ী ইত্যাদি এই স্কিমের অন্তর্গত।

সমতা স্কিমঃ যাদের বাৎসরিক ইনকাম সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তারা এই স্ক্রিনে অংশ নিতে পারবেন। অর্থাৎ স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে তারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত।

কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন

কোন স্কিমে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন তা পর্যায়ক্রমে নিচে দেওয়া হল।

প্রবাস স্কিমঃ নিচে প্রবাস স্কিমে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন তা একটি ছবির মাধ্যমে দেওয়া হল।
প্রবাস স্কিম

প্রগতি স্কিমঃ ছবির মাধ্যমে প্রগতি স্কিমে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন তা দেওয়া হল।
প্রগতি স্কিম


সুরক্ষা স্কিমঃ সুরক্ষা স্কিমে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন তা নিচে একটি ছবির মাধ্যমে দেওয়া হল।
সুরক্ষা স্কিম


সমতা স্কিমঃ নিচে সমতা স্কিমে কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন তা দেওয়া হল।
সমতা স্কিম

সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা কি

সর্বজনীন পেনশনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দিক বা সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধা বা উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
  • ১৮-৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষয় নাগরিকগণ এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
  • সরকার মাসিক চাঁদার একটি অংশ অনুদান হিসেবে নিম্ন আইসিমার নিচে নাগরিকদের জন্য পেনশন কর্মসূচিতে দিতে পারে।
  • পেনশনধারীরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
  • ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র কে ভিত্তি করে নাগরিকরা পেনশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে।
  • বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা এই সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত হতে পারবে।
  • প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে না। তবে পরবর্তীতে এটি বাধ্যতামূলক করা হবে।
  • সরকারি ও আধা সরকারি বা সাহিত্য শাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বাইরে থাকবে। পরবর্তীতে সরকার তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
  • এ পেনশন পেতে হলে হলে আপনাকে অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।
  • আপনি যদি কখনো আপনার কর্মস্থল বা চাকরি পরিবর্তন করেন তার পরেও আপনি এ পেনশনের আওতাভুক্ত থাকবেন। অর্থাৎ প্রতিটা নাগরিকের জন্য আলাদা আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে।
  • সর্বনিম্ন একটি মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা থাকবে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীরা ৩ মাসে অথবা ত্রৈমাসিক হিসেবে চাঁদা দিতে পারবে।
  • সর্বজনীন পেনশনের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না হলে সাময়িকভাবে হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে তা পুনরায় চালু করতে হলে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেয়ার মাধ্যমে চালু করতে হবে।
  • এ পদ্ধতিতে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা নির্ধারণ করে দেবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
  • সর্বজনীন পেনশনভোগীরা আর্থিক ক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ জমা করতে পারবে।
  • নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনসনে থাকাকালীন ৭৫ বছর হওয়ার আগে যদি মারা যায় তবে জমাকরির নমিনি বাকি সময়কালের জন্য মাসিক পেনশন হিসেবে পাবে।
  • ৬০ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে পেনশন তহবিলে লোভ ভাঙসসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন পাবে সর্বজনীন পেনশনধারীরা।
  • কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা দানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ তার নমিনিকে মুনাফা সহ ফেরত দেওয়া হবে।
  • মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
  • সরকার পেনশন কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করবে।
  • নিম্ন আয় সীমার নিচের সকল নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন কর্মসূচিতে মাসিক চাদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারে।
  • এ ব্যবস্থা সহজ গম্য এবং স্থানান্তরযোগ্য অর্থাৎ কারো যদি চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন হয় তবে তার অবসর হিসেবে স্থিতি, চাঁদাপ্রধান ও অবসর সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
  • জমা করা টাকা নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তবে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আর্থিক রিটার্ন নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবে।

সর্বজনীন পেনশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন

সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার ইউপেনশন(upension) নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। আগ্রহীদের অবশ্যই www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হবে।উপরোক্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার আগে অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে যেন ভুল তথ্য প্রদান না করা হয়।
কারন ভুল তথ্য প্রদান করলে আপনার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে এবং জনকৃত অর্থ আপনি ফেরত পাবেন না। তাই রেজিস্ট্রেশন করার আগে অবশ্যই ভালো মতো চেক করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে , কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন , সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা কি এবং সর্বজনীন পেনশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম সহ সর্বজনীন পেনশন ভিত্তিক অন্যান্য সকল তথ্য প্রদান করার চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করছি সর্বজনীন পেনশনে কয়টি স্কিম আছে এবং সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। তাই এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার কোন উপকার হয় বা ভালো লাগে তবে অবশ্যই, এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url