আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা - আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কী হয়

আজ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা। আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কী হয়। আনারস একটি রসালো মৌসুমী (গ্রীষ্মমন্ডলীয়) ফল। এটি পুষ্টিগুণের ভরপুর এবং সুস্বাদু ফল। এটি সকল ধরনের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি ফল। তবে আনারসের স্বাদ এর জন্য কিছু ভিন্নতা রয়েছে।

আনারসের(pineapple)উপকারিতা এবং অপকারিত -আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কী হয়
এর ফলে অনেকের কাছে এটি প্রিয় এবং অনেকের কাছে এটি অপ্রিয় ফল। ধারণা করা হয় , প্রথম ১৯৪৩ সালে কলম্বাস এই ফল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল অথবা প্যারাগুয়ে ( এর মধ্যে যেকোনো একটি ) হতে আবিষ্কার করেন। এবং তা পরবর্তীতে ইউরোপে নিয়ে আসেন। চলুন দেখেনি আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কী হয়।

ভূমিকা

আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো কি কি, আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয় এবং আনারস চাষ পদ্ধতি সহ আনারস সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য জানতে হলে আপনাদেরকে এ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে বা পড়তে হবে।

আনারস চাষ পদ্ধতি

আনারস চাষের জন্য সব থেকে ভালো মাটি হল উঁচু দোআঁশ মাটি। যেখানে পানি জমে থাকবে না এরকম জায়গা আনারস চাষের জন্য উত্তম। আনারস চারা রোপণের জন্য গোবর সার, পটাশ, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হয়। পটাশ এবং ইউরিয়া সার চারা রোপণের চার-পাঁচ মাস পর থেকে পাঁচ বারে অথবা পাঁচ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। এবং বাকি সারগুলো আনারসের চারা রোপণের আগে জমির মাটির সাথে প্রয়োগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়।
এই সারগুলো পরবর্তীতে আর প্রয়োগ করতে হয় না। এর চারা লাগানোর উত্তম সময় হচ্ছে আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। চারা লাগানোর সময় এক চারার লাইন থেকে অন্য চারার লাইনের দূরত্ব চার ফিট থেকে সাড়ে চার ফিট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব তিন ফিট থেকে সাড়ে তিন ফিট হওয়া উত্তম। আনারস সাধারণত চারা রোপণের ১৫ থেকে ১৬ মাস পর ফল বাজারজাত করা যায়।

আনারসের জাতসমূহ

আমাদের দেশে প্রায় অনেক জাতের আনারস পাওয়া যায় । এর মধ্যে কিছু অন্যতম জাত হলো_ হানি কুইন, ঘোড়াশাল, জায়েন্ট কিউ বা কেলেঙ্গা এবং জলঢুপি। আনারসের এই জাতগুলোই আমাদের দেশের সবথেকে বেশি পাওয়া যায়।

আনারসের যত পুষ্টিগুণ

আনারস মানুষের জন্য এমন একটি উপকারী ফল যার পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, শারীরিকভাবে শক্তিশালী করতে এবং বদহজম থেকে রক্ষায় অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।আনারসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আইরন, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬, ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবার ইত্যাদি।

আনারসের উপকারিতা

  • জ্বরের ওষুধ হিসেবে আনারস প্রধান ঔষধ হিসেবে করে কাজ করে।
  • আনারস ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং নিরসনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ভাইরাসজনিত রোগ যেমন জ্বর ও জন্ডিস থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
  • চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
  • এটি গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থার সময়কে প্রভাবিত করে।
  • বদহজম হওয়া থেকে সাহায্য করে।
  • মানুষের শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে।
  • মুখের ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করে।
  • হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • এটি ত্বকের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
  • দাঁতকে মজবুত এবং সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
  • আনারস শরীরের ওজন কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে।

আনারসের অপকারিতা

  • খালি পেটে অতিরিক্ত আনারস খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
  • যেহেতু আনারসে সুগার রয়েছে সেজন্য অতিরিক্ত আনারস খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় দেখা যায় যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে আনারস খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
  • এছাড়াও অতিরিক্ত আনারস খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত আনারস খেলে পেট ব্যথার হতে পারে।
  • এছাড়া আনারস অতিরিক্ত খেলে মুখের কোমলতা নষ্ট হয়ে যায়।
  • বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে হতে পারে।
  • এতে এসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় মুখ ও দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কী হয়

আমাদের দেশে একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে, আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয়ে নাকি মানুষ মারা যায়। এই কথাটুকু কতটুকু যুক্তিসঙ্গত চলুন দেখে নেয়া যাক। আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে এটা একটি ভুল ধারণা। এটিকে খাদ্য কুসংস্কার বলা হয়।
আনারস একটি এসিডিক ও টক জাতীয় ফল হওয়ার ফলে কেউ যদি এটি খেয়ে দুধ পান করে, অথবা দুধ পান করে আনারস খায় তবে তার পেট ফাঁপা, বদহজম অথবা পেট খারাপ হতে পারে। তবে কেউ যদি আনারস এবং দুধ খাওয়ার মাঝখানে মিনিমাম দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতি নেই তবে তার এ ধরনেরও কোনো সমস্যা হবে না। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই এর ফলে বিষক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই আমরা সবাই এ ধরনের কুসংস্কার ছড়ানো থেকে বিরত থাকি।

আনারসের রেসিপি

আনারস একটি ফল জাতীয় খাবার হলেও বর্তমান সময়ে এটি দিয়ে অনেক ধরনের লোভনীয় খাবার তৈরি হচ্ছে। যেমন জিলাপি, আচার, টক ঝাল চাটনি এবং সালাদ এর সবকিছুই এখন আনারস দিয়ে তৈরি হচ্ছে। যা মানুষের কাছে লোভনীয় এবং প্রিয় হয়ে উঠেছে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা, আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়,। তাই এ পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে,তবে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন এবং পোস্টগুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url