বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি-রাম্বুটানের উপকারিতা এবং রাম্বটন ফলের দাম

প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি কি কি উপায়ে করতে হয় এবং বিদেশি ফল রাম্বুটানের উপকারিতা কি তা জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার্থে এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব , বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি এবং বিদেশি ফল রাম্বুটানের উপকারিতা কি ।
বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি-উপকারিতা ও চারা পাওয়ার উপায়
এবং রাম্বুটান ফলের উপকারিতা , রাম্বুটানের চারার দাম , রাম্বুটানের চারা কোথায় পাবেন এবং রাম্বুটান ফলের দাম সহ রামবুটানে যাবতীয় তথ্য এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করব।রাম্বুটান একটি উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। এটি দেখতে অনেকটাই লিচুর মত। কিন্তু এটি খেতে লিচুর থেকেও অধিক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল । যা বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত।

ভূমিকা

বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি জানার আগে আপনাকে জানতে হবে রাম্বুটানের সকল তথ্য। যেহেতু রামবুটান আমাদের দেশের একটি নতুন বিদেশি জাতীয় ফল , এবং এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু তাই এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে সঠিক উপায়ে চাষাবাদ করলে অনেক লাভবান হওয়া যাবে। তাছাড়া যেসব বিদেশি ফল আমাদের দেশে সফলভাবে লাভজনক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার মধ্যে রামবুটান অন্যতম।
আর তাই বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি গুলো কি কি এবং এর অন্যান্য সব ধরনের তথ্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আমরা আশা করব আপনারা ধৈর্য ধরে এই পুরো আর্টিকেলটি পড়বেন এবং রাম্বুটান সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করবেন ।

বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি

বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি বা কিভাবে চাষ করবেন এর বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

চারা তৈরিঃ রাম্বুটানের বিভিন্ন উপায়ে চারা তৈরি করা যায়। তবে জোড়া কলম করে এর চারা তৈরি করা সব থেকে ভালো। এ পদ্ধতিতে চারা নষ্ট বা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কম থাকে। রামবুটানের বীজ থেকে গজানো এক বছর বয়সী চারার উপরিভাগ অর্থাৎ মাথা কেটে সেখানে কিছুটা ফাঁকা করে ফল হয়েছে এমন রাম্বুটান গাছের ডগা ক্রস করে কেটে নিয়ে এসে বীজ থেকে গজানো ওই চারার মাথার ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে দড়ি , সুতা অথবা ফিতা দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিতে হবে।

আর এ পদ্ধতিকেই বলে জোড়া কলম বা ক্লেফট গ্রাফটিং। এছাড়াও চোখ কলমের মাধ্যমে বড় এবং সুঠাম আকৃতির ভালো গাছ পাওয়া যায়। চোখ কলম করার উপযুক্ত সময় হল বসন্তকাল আসার আগ মুহূর্তে।

উপযুক্ত মাটিঃ রামবুটান চাষ করার জন্য সবথেকে ভালো বা উপযোগী মাটি হল , উঁচু , বেলে দো-আঁশ মাটি। এছাড়াও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতেও রামবুটান চাষ করা যায় । রামবুটান চাষের উপযোগী মাটি করার জন্য মাটিতে পরিমাণ মতো জৈব সার দিলে এর ফলন অনেক ভালো হয় । আর মাটির পিএইচ মান ৪.৫-৬.৫ হলে রামবুটান এর ফল অনেক বেশি পরিমাণে ধরে।

আবহাওয়াঃ রামবুটান এর ফল ধরার উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ২০-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তবে ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড অথবা ১২-২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাতেও এর ভালো ফলন হয়ে থাকে । তবে যে এলাকাগুলোতে বৃষ্টি বেশি হয় সেখানে রামুটানের ফলন অনেক বেশি ভালো হয়। আর কম বৃষ্টিপাতের এলাকা হলে , বেশি বেশি পানি সেচ দিতে হয় ।

চাষ পদ্ধতিঃ যেখানে রাম্বুটানের চারা লাগাবেন সেই স্থানের চারিদিকে এক মিটার পরিমাণ গর্ত করে ৫০-৫০ পরিমাণ মাটি এবং জৈব সার ভালোমতো মিশ্রণ করে এক এক সপ্তাহর মতো রেখে দিতে হবে। এক সপ্তাহ পর সেখানে রাম্বুটানের চারা সোজা করে লাগিয়ে বাশ বা শক্ত লাঠি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে।এবং পরিমাণ মতো পানি দিয়ে দিতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে যেন যেখানে গাছ লাগিয়েছেন সে জায়গাটি শুকিয়ে না যায় ।কারণ রামবুটান গাছের জন্য পানির পরিমাণ বেশি লাগে। এছাড়াও গাছের আশেপাশে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী বেশ কিছুদিন পর পর পরিমাণ মতো ফসফরাস , পটাশ এবং নাইট্রোজেন জাতীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে এর পরিমাণ বেশি হলে গাছের ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়াও গাছের অতিরিক্ত বা অবাঞ্চিত বা মরা ডালপালা সেঁটে দিতে হবে। এবং প্রতিবার ফল উত্তোলনের পর লিচু গাছের মতো ফল ধরা ডালগুলো কেটে বা ভেঙে দিতে হবে । বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমিতে .৮০-১২০ টি যারা লাগাতে হবে। রামুটান চারা লাগানোর উত্তম সময় হলো বর্ষা শুরুর আগে।

ফলনঃ সাধারণত তিন বছর বয়স থেকেই রামবুটানের ফল ধরা শুরু হয়ে যায়। এবং ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। একটি তিন বছরের গাছ থেকে ১৫-২০ কেজি , ১০ বছরের কাছ থেকে ৫০-২০০ কেজি এবং ২০ বছরের কাছ থেকে ৩০০-৪০০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

রাম্বুটান ফলের জাত গুলো কি কি

বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি বা চাষ করার আগে আপনাকে জানতে হবে রাম্বুটান ফলের জাত গুলো কি কি? রামবুটান বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য মালয়েশিয়ার পি-১, পি-৪,পি-৫, পি-৬, পি-৮, পি-২২, পি-২৮, পি-৫৪, পি-৬৩, ফিলিপাইনের সিবাবাত, ইন্দোনেশিয়ার মেরাহ ও কোয়েনেং এবং সিঙ্গাপুরের লি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া , থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে রামবুটানের যে জাতগুলো চাষ করা হয় বা দেখা যায় সে জাত গুলোই বাংলাদেশের চাষ করার জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী এই জাতগুলোর থেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে বাংলাদেশে এখন বাড়ি রামবুটান-১ এবং বিএউ রামবুটান-১ চাষ করা হচ্ছে।

রাম্বুটানের চারা কোথায় পাবেন

যেহেতু এটি বাংলাদেশে একটি নতুন ফল। তাই হয়তো বা সবার মনে একটাই প্রশ্ন আপনারা এর চারা কোথায় পাবেন ? রাম্বুটান গাছের চারা আপনি আপনার নিকটস্থ বন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ভালো এবং বড় প্রতিটি নার্সারিতেই রামবুটান গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। তবে চরণে ওর আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনি যে চারটি নিচ্ছেন সেটি যেন জাত এবং মানে ভালো হয়।

রাম্বুটানের চারার দাম

রামবুটান গাছের চারার জাত এবং মান ভেদে এর দামেরও পার্থক্য হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় চাহিদার উপর নির্ভর করে এ গাছের চারার দামও বিভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এ গাছের চারা সাধারণত ৭৫০-১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

রাম্বুটান ফলের দাম

রামবুটান ফল বিদেশি হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে চাষাবাদ করার জন্য এর বাজার মূল্য খুব একটা বেশি না। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি কেজি রাম্বুটান ফল ৪০০-৫০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে যে পরিমাণ রামবুটান ফল পাওয়া যায়, তা বিক্রি করলে অনায়াসে ১০০০০০-১৫০০০০ টাকা আয় করা যায়। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে রামবুটান ফলের বীজ ৩-৫ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।

রাম্বুটান ফলের উপকারিতা

রামবুটান ঔষধি এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এই ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে রাম্বুটান ফলের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  • রামবুটান ফল আমশায় এবং ডায়রিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • এছাড়া এই ফল ডায়াবেটিকস রোগের প্রতিরোধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এটি কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
  • রাম্বুটান ফলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায়। এই ফল খেলে শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
  • কাশি, পেট ব্যথা এবং টিউমার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে রামবুটান ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এছাড়াও জ্বর এবং শরীরের ক্ষতস্থান পূরণে রাম্বুটান প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • রামবুটান ফলে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার। যার ফলে এটি হজমে সাহায্য করে বা হজম শক্তিকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
  • এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • রামবুটান গাছের পাতার রস বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে সেই ক্ষতস্থানে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

রাম্বুটানের ভবিষ্যৎ কেমন

যেহেতু এই ফল বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। তাই বাংলাদেশের রাম্বুটান চাষ এর ভবিষ্যৎ অনেক সম্ভাবনাময় বা ভালো। এ ফলের চাষ সঠিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে করলে বেকারত্বের হার অনেকাংশে কমে যাবে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে।

শেষ কথা

রামবুটান ফল যেহেতু আমাদের দেশে একদম নতুন একটি ফল। তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য খুব ভালোভাবে এর সম্পর্কে সবকিছু তথ্য নিয়ে জেনে তারপরে এর চাষ করা উচিত। আর তা না হলে লাভ করতে গিয়ে উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যে, বিদেশি ফল রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি, এর উপকারিতা, এবং এর যাবতীয় সব তথ্য। তাই এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে । তবে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং এরকম ভালো ভালো আর্টিকেল করতে চাইলে নিয়মিত এই ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url