ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা এবং গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা বিস্তারিত দেখুন

প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা এবং গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু কোথাও কোনো সঠিক তথ্য বা উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আর তাই আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো, ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা এবং গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা সহ গরুর অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য।
ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা এবং গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা গুলো
বাংলাদেশের সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে কমবেশি প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু পালন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন বা খামারে গরু পালন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই গরু পালন করতে গেলে গরুর যেন কোন ধরনের রোগ বালাই না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা আপনাদের কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো, ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা এবং গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা সহ গরু সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব, ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা , গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা , গরুর ums তৈরি করার নিয়ম, গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম এবং গরুর ভ্যাকসিনের তালিকা সহ গরু সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে গবাদি পশু পালন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যা বেকারত্ব দূরীকরনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করছে। অনেকে পড়াশোনা শেষ করে অথবা পড়াশোনা অবস্থাতেই গরু পালন করে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। আমি নিজেও পড়াশোনা শেষ করে গরু পালন শুরু করি। এবং ছোট একটি গরু খামার তৈরি করি।
আর তাই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জানাবো ষাড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা কি হওয়া উচিত। তারই ধারাবাহিকতায় অনেক ছোট ছোট প্রান্তিক খামারীগণ অথবা বড় বড় খামারি ষাঁড় গরু মোটাতাজাকরণের নিয়ম জানার চেষ্টা করেন তাদের জন্য নিচে বিস্তারিতভাবে ষাড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা তৈরি করার নিয়ম দেওয়া হল।

ক্রমিক নং

উপাদান

পরিমাণ

ভুট্টা ভাংগা

২০ কেজি

গম ভাঙ্গা

২০ কেজি

ক্যাটেল ফিড

২০ কেজি

ধান ভাঙ্গা

১০ কেজি

ছোলা ভাঙ্গা

১০ কেজি

খেসারির ডাল ভাঙ্গা

৭ কেজি

মসুর ডাল ভাঙ্গা

৭ কেজি

সয়াবিন মিল

৬ কেজি


সর্বমোট =

১০০ কেজি

গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা গুলো

নিচে বিস্তারিতভাবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা গুলো কি কি হওয়া উচিত এবং কোনগুলো দিলে গাভী গরু থেকে বেশি পরিমাণে দুধ পাওয়া যায় এবং বাছুর ভালো থাকে তা বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হল।

ক্রমিক নং

উপাদান

পরিমাণ

গমের ভুসি

৪০ কেজি

ভুট্টা ভাংগা

২০ কেজি

  ধানের গুড়া

১৫ কেজি

ডিসিপি

১ কেজি

ছোলা ভাঙ্গা

৩ কেজি

খেসারির ডাল ভাঙ্গা

১০ কেজি

মসুর ডাল ভাঙ্গা

৫ কেজি

সয়াবিন মিল

৬ কেজি


সর্বমোট =

১০০ কেজি

গরুর ums তৈরি করার নিয়ম

গরুর ums বা ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র খুবই কার্যকরী একটি খাদ্য উপাদান যা পানি , খড় , চিটাগুড় বা নালি গুড় এবং ইউরিয়া এ কয়টি উপাদানের দ্বারা তৈরিকৃত গরুর একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য। এর ফলে গরু দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। আর এই গরুর তৈরি করার নিয়ম হলো ৮২ ভাগ শুকনো খড়, ১৫ ভাগ চিটাগুর বা নালিগুড় , ৩ ভাগ ইউরিয়া এবং পরিমাণ মতো পানি।

অর্থাৎ যদি ১০ কেজি শুকনো খড় হয় তবে চিটাগাং নালিগুড় হবে ১.৫ থেকে ২ কেজি আর ইউরিয়া হবে ৩০০ গ্রাম এবং পানি হবে পরিমাণ মতো। তবে মনে রাখতে হবে যেন এই ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা ইউএমএস যেন অতিরিক্ত ভিজা বা পাতলা না হয়। আর যদি অতিরিক্ত ভিজা বা পাতলা হয়ে যায় তবে পানি ছাড়া সবকিছুর পরিমাণ উপরে বর্ণিত পরিমাণ অনুযায়ী বাড়াতে হবে।

গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম

গরুকে সুস্থ রাখতে আমাদের প্রতি তিন মাস পর পর কৃমির কোর্স করানো উচিত। কারণ কৃমি মুক্ত গরুর শরীরের শারীরিক গঠন দ্রুত বেড়ে যায়। গরুর কৃমি কোর্স করানোর সব থেকে ভালো নিয়ম হলো রাতের বেলা ক্রিমের ঔষধ গুড়া করে চিটাগুড় অথবা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আবহাওয়া যদি অনেক বেশি গরম হয় তবে কৃমি কোর্স করানো যাবে না। রাতের বেলা কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হলে পরদিন সকাল থেকে লিভার টনিক এবং জিংক খাওয়াতে হবে। 
লিভার টনিক ৬ থেকে ৭ দিন সকালের পানির সাথে গরুর সাইজ অনুযায়ী 30 থেকে 50ml করে খাওয়াতে হবে। এবং বিকালের পানির সাথে গরুর সাইজ অনুযায়ী 30 থেকে 50ml করে ৬ থেকে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। সাধারণত লিভার টনিক এবং জিংক খাওয়ালেই অন্য কিছুর প্রয়োজন হয় না। তবে এ দুটো খাওয়ানোর পরে পাঁচ থেকে সাত দিন ক্যালসিয়াম খাওয়ানো ভালো। এছাড়াও কৃমি কোর্স করানোর আগে অবশ্যই উপজেলা প্রাণিসম্পদ এর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কৃমি কোর্স করানো সব থেকে ভালো।

গরুর ভ্যাকসিনের তালিকা

গরু পালন করতে হলে অথবা বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করতে গেলে অবশ্যই আমাদের গরুর রোগ সম্পর্কে জানতে হবে এবং গরুর ভ্যাকসিন সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ গরুর রোগ এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের যদি সম্পূর্ণ ধারণা থাকে তবে গরু পালনে লাভের আসা অনেকটাই বেড়ে যায়। গরুকে যদি নিয়মিত ভাবে ভ্যাকসিনেশন করা হয় তবে ৮০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে রোগ না হওয়ার । তাই গরুর ভ্যাকসিন গরু পালনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর এজন্য আমরা আপনাদের জন্য নিচে বিস্তারিত ভাবে গরুর ভ্যাকসিন তালিকা দিয়েছি।

রোগের নাম

ভ্যাকসিন বা টিকার নাম

প্রয়োগের মাত্রা

প্রয়োগের স্থান

রোগ প্রতিরোধ কাল

ক্ষুরা রোগ

লিভ্যালেন্ট এফ.এম.ডি.টিকা

৬ এম.এল প্রতি প্রাপ্ত বয়স্ক প্রাণী; ৩ মি.লি./প্রতি অপ্রাপ্ত বয়স্ক; প্রথমবার টিকা দেয়ার ২-৪ সপ্তাহ পরে বোস্টার টিকা প্রদান

চামড়ার নীচে

৪-৬ মাস

  বাদলা রোগ

বি. কিউ টিকা

৫মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক;২.৫ মি.লি./অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

৬ মাস

এ্যানথ্রাক্স বা   তড়কা রোগ

তড়কা স্পোর টিকা

১ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক; ০.৫ মি.লি./অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

১ বছর

  গলাফুলা রোগ

এইচ.এস টিকা

৫ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক; ২.৫ মি.লি/অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

১ মাস

ম্যাসটাইটিস বা  ওলান ফোলা রোগ

ম্যাসটাইটিস  ভ্যাকসিন

২ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক 

মাংসের ভিতর

বাচ্চা দেয়ার ৪৫ দিন পূর্বে ১ম ডোজ এবং ২য় ডোজ বাচ্চা জন্মের ৩৫ দিন পূর্বে। ৩য় ডোজ বাছুর জন্মের পর ৫২ দিনের সময়

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি ,ষাঁড় গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা , গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা , গরুর ums তৈরি করার নিয়ম, গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম এবং গরুর ভ্যাকসিনের তালিকা সহ গরু সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
আর তাই এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কোন উপকারে এসে থাকে অথবা ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url