গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম বিস্তারিত দেখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো অনেকেই গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম কি তা জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু এর সঠিক কোন উত্তর বা তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আর তাই আমরা আপনাদের কথা ভেবে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব,গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
গরুর বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন এবং গরুর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে গরু পালন করা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখন অনেক তরুণ প্রজন্ম পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে গরুর খামার দিয়ে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে গরু পালন, গরুর রোগ বালাই চিহ্নিতকরণ, গরুর কোন রোগের জন্য কোন ভ্যাকসিন দিতে হয় এবং গরুর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা না থাকার ফলে অনেকেই আবার আর্থিকভাবে বেশ লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। আর তাই আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো,গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব,গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম, ভ্যাকসিন কি, ভ্যাকসিন কেন দিতে হবে, গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত তথ্য।
আর তাই আশা আমরা আশা করছি আপনারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পুরোটি পড়বেন এবং গরুর বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন এবং গরুর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গুলো জেনে নিবেন।

ভ্যাকসিন কি

ভ্যাকসিন কি এর একদম সাধারন যদি উত্তর দেই তবে যেই ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরুর ওই রোগ আর হয় না বা ওই রোগ হতে গরুকে রক্ষা করে তাকেই ভ্যাকসিন বলা হয়। ডাক্তারদের ভাষায় ভ্যাকসিন বাটিকায় একটি জৈবিক প্রোডাক্ট। যা নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে উক্ত জীবাণু সংগ্রহ করে বিশেষ একটি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। এবং পরে সেই জীবনকে নিস্তেজ বা অর্ধমৃত বা মৃত অবস্থায় এনে এক ধরনের জীবাণুজাত ঔষধ তৈরি করা হয়। যার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহে প্রবেশ করালে সেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে তাকে ভ্যাকসিন বা টিকা বলে।

ভ্যাকসিন কেন দিতে হবে

গরু পালন বা গবাদি পশু পালনের আগে আপনাকে অবশ্যই, গবাদি পশুর রোগ বালাই, চিকিৎসা এবং কোন রোগের জন্য কোন ভ্যাকসিন দিতে হয় সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে বা জানতে হবে। আর আপনি যদি গরুর বা গবাদি পশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। কারণ আপনি যখন গরুকে বা গবাদিপশুকে ভ্যাকসিনেশন করবেন তখন সেই গরুর ওই রোগগুলো আর কখনোই হবে না বা ঐ রোগ থেকে সুস্থ রাখতে গরুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। যার ফলে কৃষক বা খামারি ভাই-বোনেরা লস থেকে মুক্ত হবেন এবং অধিক লাভবান হবেন।

গরুর ভ্যাকসিন তালিকা

গরু পালন করতে হলে অথবা বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করতে গেলে অবশ্যই আমাদের গরুর রোগ সম্পর্কে জানতে হবে এবং গরুর ভ্যাকসিন সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ গরুর রোগ এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের যদি সম্পূর্ণ ধারণা থাকে তবে গরু পালনে লাভের আসা অনেকটাই বেড়ে যায়। গরুকে যদি নিয়মিত ভাবে ভ্যাকসিনেশন করা হয় তবে ৮০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে রোগ না হওয়ার । তাই গরুর ভ্যাকসিন গরু পালনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর এজন্য আমরা আপনাদের জন্য নিচে বিস্তারিত ভাবে গরুর ভ্যাকসিন তালিকা দিয়েছি।

রোগের নাম

ভ্যাকসিন বা টিকার নাম

প্রয়োগের মাত্রা

প্রয়োগের স্থান

রোগ প্রতিরোধ কাল

ক্ষুরা রোগ

লিভ্যালেন্ট এফ.এম.ডি.টিকা

৬ এম.এল প্রতি প্রাপ্ত বয়স্ক প্রাণী; ৩ মি.লি./প্রতি অপ্রাপ্ত বয়স্ক; প্রথমবার টিকা দেয়ার ২-৪ সপ্তাহ পরে বোস্টার টিকা প্রদান

চামড়ার নীচে

৪-৬ মাস

  বাদলা রোগ

বি. কিউ টিকা

৫মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক;২.৫ মি.লি./অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

৬ মাস

এ্যানথ্রাক্স বা   তড়কা রোগ

তড়কা স্পোর টিকা

১ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক; ০.৫ মি.লি./অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

১ বছর

  গলাফুলা রোগ

এইচ.এস টিকা

৫ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক; ২.৫ মি.লি/অপ্রাপ্ত বয়স্ক

চামড়ার নীচে

১ মাস

ম্যাসটাইটিস বা  ওলান ফোলা রোগ

ম্যাসটাইটিস  ভ্যাকসিন

২ মি.লি./প্রাপ্ত বয়স্ক 

মাংসের ভিতর

বাচ্চা দেয়ার ৪৫ দিন পূর্বে ১ম ডোজ এবং ২য় ডোজ বাচ্চা জন্মের ৩৫ দিন পূর্বে। ৩য় ডোজ বাছুর জন্মের পর ৫২ দিনের সময়

গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম

গরুকে সুস্থ রাখতে আমাদের প্রতি তিন মাস পর পর কৃমির কোর্স করানো উচিত। কারণ কৃমি মুক্ত গরুর শরীরের শারীরিক গঠন দ্রুত বেড়ে যায়। গরুর কৃমি কোর্স করানোর সব থেকে ভালো নিয়ম হলো রাতের বেলা ক্রিমের ঔষধ গুড়া করে চিটাগুড় অথবা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আবহাওয়া যদি অনেক বেশি গরম হয় তবে কৃমি কোর্স করানো যাবে না। রাতের বেলা কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হলে পরদিন সকাল থেকে লিভার টনিক এবং জিংক খাওয়াতে হবে।

লিভার টনিক ৬ থেকে ৭ দিন সকালের পানির সাথে গরুর সাইজ অনুযায়ী 30 থেকে 50ml করে খাওয়াতে হবে। এবং বিকালের পানির সাথে গরুর সাইজ অনুযায়ী 30 থেকে 50ml করে ৬ থেকে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। সাধারণত লিভার টনিক এবং জিংক খাওয়ালেই অন্য কিছুর প্রয়োজন হয় না। তবে এ দুটো খাওয়ানোর পরে পাঁচ থেকে সাত দিন ক্যালসিয়াম খাওয়ানো ভালো। এছাড়াও কৃমি কোর্স করানোর আগে অবশ্যই উপজেলা প্রাণিসম্পদ এর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কৃমি কোর্স করানো সব থেকে ভালো।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি,গরুর কৃমি কোর্স করানোর নিয়ম, ভ্যাকসিন কি, ভ্যাকসিন কেন দিতে হবে, গরুর ভ্যাকসিন তালিকা এবং গরুর ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত তথ্য।
তাই এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে এসে থাকে তবে অবশ্যই আপনারা আপনাদের বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url