লম্বা হওয়ার উপায় এবং লম্বা না হওয়ার কারণ বিস্তারিত দেখুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি লম্বা হওয়ার উপায় এবং লম্বা না হওয়ার কারণ নিয়ে চিন্তিত ? যদি চিন্তিত থাকেন তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো লম্বা হওয়ার উপায় এবং লম্বা না হওয়ার কারণ গুলো কি কি।
অনেকেই মনে করেন যে, লম্বা হওয়া বা শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি পুরোপুরি জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি বা লম্বা হওয়াতে জেনেটিক্যাল এর প্রভাব থাকলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন , সঠিক শারীরিক ব্যায়াম এবং খাদ্য অভ্যাসের উপর .২০% উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব নির্ভর করে। তাই চলুন দেখেনি লম্বা হওয়ার উপায় এবং লম্বা না হওয়ার কারণগুলো কি কি ।
ভূমিকা
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব যে, লম্বা হওয়ার উপায় , লম্বা না হওয়ার কারণ , ঔষধ খেলে কি লম্বা হওয়া যায় এবং কত বছর বয়স পর্যন্ত মানুষ লম্বা হয় সহ লম্বা হওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য।
তাই এই পুরো আর্টিকেলটি খুব ভালো করে পড়ে দেখুন। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে এবং ভালো লাগবে।
লম্বা হওয়ার উপায়
কিছু কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে যা নিয়মিতভাবে মেনে চললে লম্বা হতে সাহায্য করে। এমনই কিছু প্রাকৃতিক উপায় নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনঃ দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সবচাইতে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় অপুষ্টির কারণে। কারণ পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার দেহের কোষ এবং হাড় মোটাতাজাকরণ ও শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিতভাবে খাবার তালিকায় রাখুন বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মুক্ত এবং ফ্রেশ সবুজ শাকসবজি , ফলমূল , শিম , মটরশুটি , ডাল , গরুর দুধ , কাজুবাদাম , বাদাম , ডিম , অশ্বগন্ধা , ব্রকলি , সয়াবিন , গাজর , কুমড়ো বীজ এবং শালগম।
এগুলো আপনার শরীরে ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস এবং কার্বোহাইড্রেট এর ঘাটতি পূরণ করে। যা আমাদের দেহের কোষ গঠন এবং বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এই খাবারগুলো থেকে আমাদের দেহে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ হয়। ক্যালসিয়াম আমাদের হারের গঠন এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এবং ভিটামিন ডি আমাদের দেহের গ্রোথ হরমোন উৎপন্ন করে থাকে।
শারীরিক ব্যায়ামঃ আমাদের শরীরে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো গ্রোথ হরমোন। আর এই গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে নিয়মিতভাবে সঠিক উপায় শারীরিক ব্যায়াম। এই শারীরিক ব্যায়ামের মধ্যে স্ট্রেচিং এবং হাঙ্গিং উচ্চতা বৃদ্ধিতে সবচাইতে বেশি সহায়তা করে । এছাড়াও অনেক ধরনের খেলাধুলা আছে যার মাধ্যমে আমাদের পরিশ্রম এবং শারীরিক ব্যায়াম দুটোই হয়ে থাকে। যেমন ফুটবল , সাঁতার , বাস্কেটবল , টেনিস , এ্যারোবিক্স এবং ক্রিকেট।
সোজা হয়ে চলাঃ শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে সোজা হয়ে চলা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। সোজা হয়ে চলা বলতে আপনি যখন চলাফেরা করবেন অথবা বসে থাকবেন তখন সঠিকভাবে মেরুদন্ড এবং ঘাড় সোজা রেখে চলাফেরা করতে হবে অথবা বসতে হবে। এবং শোয়ার সময় মেরুদন্ড পারতো পক্ষে চেষ্টা করতে হবে সোজা রেখে এবং ঘাড় খুব বেশি বাঁকা না করে শোয়া ।
যোগব্যায়াম করাঃ যোগব্যায়াম এমন একটি ব্যায়াম যা করলে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন অথবা মানসিক চাপ কমে যাবে। মানসিক চাপ মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। আর তাই শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে যোগ ব্যায়াম করা অনেক বেশি প্রয়োজন।
এছাড়াও দেহের বাড়তি মেদ বা ভুড়ি কমাতে যোগব্যায়াম সাহায্য করে। যার ফলে দেহকে দেখতে অনেকটা লম্বা লাগে।
পানি পান করাঃ নিয়মিতভাবে যতটুকু সম্ভব বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। কারণ পানি পান করলে দেহে পানি শূন্যতার অভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেশি বেশি পানি পান করলে দেহে সঠিকভাবে পুষ্টি শোষণ এর কাজ হয়ে থাকে। যার ফলে দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ঘুম ও বিশ্রামঃ শারীর উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঘুম ও বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঘুম ও বিশ্রাম হলো সবচাইতে ভালো পদ্ধতি। আমাদের দেহের শারীরিক উচ্চতা বা গ্রোথ পরিমিত পরিমাণে ঘুমালে এবং বিশ্রাম নিতে পারলে প্রাকৃতিকভাবে দেহে গ্রোথ হরমোন উৎপন্ন হয়।
কারণ ঘুমের সময় আমাদের দেহর টিস্যুগুলো দেহ গঠনের কাজ করে থাকে। যা আমাদের শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন বয়স অনুযায়ী আমাদের ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত এবং নিজেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি মানুষের শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ ভিটামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধি এবং হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। যার ফলে দেহে আপনা আপনি শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আর তাই প্রতিদিন ভোরের রোদ শরীরে পড়তে দিন। কারণ ভোরের রোদে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি । এছাড়াও ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার নিয়মিতভাবে খেতে হবে।
লম্বা না হওয়ার কারণ
শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি বা লম্বা না হওয়ার কারণ গুলো বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো।
- লম্বা না হওয়ার প্রধান কারণ হলো জিন গতকাল। যদি কারো বাবা-মা বা দাদা অথবা নানা লম্বা না হয় তবে সেক্ষেত্রে 90 থেকে 95 পার্সেন্ট সম্ভাবনা থেকে যায় লম্বা না হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায় ।
- সঠিক পুষ্টির অভাবেও শারীরিক বৃদ্ধি বা লম্বা নাও হতে পারে।
- গ্রোথ হরমোন এবং থাইরয়েড হরমোনের তারতমের জন্যও শারীরবৃদ্ধি না হতে পারে।
- কিডনি সমস্যার জন্য লম্বা বা শারীরিক বৃদ্ধি কম হয়।
- টিবি এবং সিলিয়াক ডিজিজের জন্য শারীরিক বৃদ্ধি কম হতে পারে।
- এছাড়াও জন্মের সময় শিশু খুব ছোট হলেও শারীরবৃদ্ধি কম হতে পারে।
- আরো কিছু শারীরিক অসুখ আছে যার জন্য লম্বা বা শারীরিক বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
ওষুধ খেলে কি লম্বা হওয়া যায়
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে, ওষুধ খেলে কি লম্বা হওয়া যায়? এমন যদি হতো যে ওষুধ খেলে খাটো মানুষ লম্বা হয়ে যাবে, তাহলে প্রযুক্তি নির্ভর দেশ চায়না বা জাপানিজরা অনেক আগেই ঔষধ খেয়ে লম্বা হয়ে যেত। এটা আসলে আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা। তবে এটা ঠিক যে উপরে বর্ণিত প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললে অনেক অংশের শারীরিক বৃদ্ধির পরিবর্তন দেখা যায়।
কত বছর বয়স পর্যন্ত মানুষ লম্বা হয়
মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ , জিন , হরমোন এবং জীবনধারার উপরও মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি নির্ভর করে। তাই একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম সময় শারীরিক বৃদ্ধি হতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরের শারীরিক বৃদ্ধি ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত হয়। তবে অনেক সময় সঠিকভাবে চলাফেরা বা নিয়মকানুন মেনে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেলে এই শারীরিক বৃদ্ধি বিষ থেকে বাইশ বছরের পরেও হতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যে, লম্বা হওয়ার উপায় , লম্বা না হওয়ার কারণ , ঔষধ খেলে কি লম্বা হওয়া যায় এবং কত বছর বয়স পর্যন্ত মানুষ লম্বা হয় সহ লম্বা হওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য।
তাই এই আর্টিকেলটি আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url